প্যারেন্টিং কি? -What is parenting?
![]() |
গুড পেরেন্টিং কি? ইসলামের দৃষ্টিতে গুড পেরেন্টিং কেন দরকার? |
প্যারেন্টিং ইংরেজি শব্দ। এক কথায় প্যারেন্টিং হলো পিতামাতার সাথে সন্তানদের আচরণ এবং প্রতিপালনের অবস্থা। তবে এটি অর্থের দিক দিয়ে অনেক ব্যাপকতা রয়েছে।
গুড প্যারেন্টিং কি?--What is Good parenting?
প্যারেন্টিং হলো সন্তানদের এবং পিতামাতার এমন এক অবস্থা যেখানে সন্তানদেরকে পিতামাতা সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিচর্যার মাধ্যমে সুষ্ঠু, সুন্দর, আদর্শ, ইতিবাচক মূল্যবোধ সম্পন্ন সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক,অর্থনৈতিক, বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে থাকেন।
গুড পেরেন্টিং কিভাবে হবো? কিভাবে গুড পেরেন্টিং হওয়া যায়?
সন্তান জন্মদানের পূর্ব থেকে সন্তান জন্মদান এবং বড় হওয়া পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যাদের পালন করতে হয় তারা হলেন পিতামাতা। পিতামাতার দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে সন্তানকে আদর্শ, মূল্যবোধ সম্পন্ন সন্তান হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
গুড পেরেন্টিং যেভাবে হবেনঃ
*সন্তানের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
*সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিন
*সন্তানকে যে আপনি ভালোবাসেন সেটা বুঝতে দিন।
*সন্তানদের জন্য পিতামাতা যে গুরুত্বপূর্ণ সেটা বুঝতে দিন
*শুধু পড়াশোনার জন্য চাপ না দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে মনোযোগী হতে সহায়তা করুন।
*প্রতিবেশির সাথে সু-সম্পর্কের ব্যাপারে উৎসাহিত করুন।
*সন্তানদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করুন যেন সন্তান সংকুচ ছাড়াই আপনার সাথে কথা বলতে পারে সব কিছু শেয়ার করতে পারে।
*খেলাধুলার ব্যাপারে উৎসাহিত করুন।
*মাঝে ঘুরতে নিয়ে যান।
*কোনো ধরনের বাজে প্রেশার তৈরি করা থেকে বিরত থাকুন।
*ধর্মীয় মূল্যবোধ শিখতে উৎসাহিত করুন
*সন্তানদের ভালো অর্জনে পুরষ্কৃত করুন।
*পরিবারের কোনো বিষয়ে তাদের পরামর্শ ও মতামত নিন।
*তারা কি পছন্দ করে কি খেলতে চায়,খেতে চায় মাঝেমধ্যে জানুন এবং দিতে চেষ্টা করুন।
গুড প্যারেন্টিং কেন দরকার? গুড প্যারেন্টিং শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কেন?
পিতামাতার জীবনে সন্তান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সন্তান হলো পিতামাতার ভালো থাকার উপকরণ। আবার পিতামাতাও সন্তানের ভালো থাকার কারণ। যাদের সন্তান নেই তারাই একমাত্র বুঝে সন্তান কতোটা গুরুত্বপূর্ণ পিতামাতার জীবনে। কিন্তু কখনো কখনো পিতামাতার কাছে মনে হয় সেই সন্তান না থাকলেই ভালো হতো। এর কারণ হচ্ছে সন্তানকে সঠিক পরিচর্যায় আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে না তুলতে পারা। পিতামাতা এবং সন্তানের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সু-সম্পর্ক তুলতে গুড প্যারেন্টিং খুবি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধর্মীয় শিক্ষা,সামাজিক মূল্যবোধ, মানুষিক বিকাশ, অর্থনৈতিক উন্নতি না হলে যেকোনো সন্তান অপ্রত্যাশিত আচরণ করতে পারে। যেটা পিতামাতা হিশেবে কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো নয়।
বোরিক এসিড কি? এর কাজ কি ? জেনে নিন উপকারি একটি জিনিস সম্পর্কে এখানে
আপনার সন্তানকে শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার হাতিয়ার আপনি নিজেই। এই দায়িত্ব আপনি নিজেই নিতে হবে। পিতামাতার সাহচর্য ছাড়া সন্তানকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তুলা সম্ভব হয়না। পিতামাতা এক সময় বৃদ্ধ হয়ে যাবে। সেই সময় পিতামাতার দেখাশুনার জন্য পিতামাতা সন্তানকে কাছে আশা করে। তারা চায় সন্তান তাদের সেবা করুক তাদের বিপদে পাশে থাকুক। কিন্তু পিতামাতা যদি তাদের সন্তানদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে না তুলেন পিতামাতার সেই কঠিন মূহুর্তে কে পাশে থাকবেন কিভাবে থাকবেন তা ভাবাই যেন কষ্টকর। পিতামাতার ভালোবাসায় এবং নেতৃত্বে সন্তান বহুদূর এগিয়ে যেতে পারে এবং পিতামাতার নাম উজ্জল করতে পারে। পিতামাতা সন্তানের অনুপ্রেরণার উৎস।
গুড প্যারেন্টিং হচ্ছে কিভাবে বুঝবেন?
এটি অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। যখন দেখবেন আপনার সাথে আপনার সন্তানের সম্পর্ক ভালো, আপনি যখন ডাকছেন তখন তারা রেসপন্স করছে,শ্রদ্ধা করছে। আপনি কোনো কিছু চাইলে বা কিছু করতে বললে সহজভাবে নেয় তখনি বুঝবেন প্যারেন্টিং হিসেবে ভালো অবস্থায় আছেন। এই ক্ষেত্রে ছোট বেলায় যদি ধর্মীয় বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয়া হয় বাচ্চাদের তখন সবচেয়ে বেশি সহজ হয়। বাচ্চাদের সাথে এমন আচরণ করা ঠিক না যেই আচরণ তাদের মনে গভীরভাবে আঘাত করে। এতে করে অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ইতিবাচক প্যারেন্টিং কেন প্রয়োজন?
সব ক্ষেত্রে ইতিবাচকতা ভালো থাকার এক ধরনের অস্ত্র। বাচ্চাদের সাথে যেকোনো বিষয়ে খুব বেশি প্রেশার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন। যেকোনো কিছুতেই অভিযুক্ত না করে খোলামেলা আলোচনা করুন। সহজে সব কিছু নিতে অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করুন। আপনি সত্য কথা বলতে পছন্দ করেন,ভালোবাসেন এটা বাচ্চাদেরকে বুঝিয়ে তুলুন। মিথ্যা কথা বলা খারাপ জিনিস। এটি ভালো মানুষ করতে পারে না। এমন উপদেশ দিন ছোট বেলা থেকেই। এর সাথে গল্প বলুন যে মিথ্যা বললে কি হয় এর পরিনাম কি হয়। আবার সত্য যে মুক্তির পথ সহজ করে দেয় সেটাও বলুন। এতে করে বাচ্চারা আরো বেশি সতর্ক থাকবে।
গুড প্যারেন্টিং প্রশিক্ষণঃ
প্যারেন্টিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও আমাদের পাঠ্যপুস্তকে সাধারণত এড়িয়া যাওয়া হয় এই বিষয়টিকে। বিশেষ কিছু প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাক্তি পর্যায়ে ছাড়া এই বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে আলোচনা করা হয়না। এর ফলে অনেকেই বুঝে না প্যারেন্টিং বিষয়টি আদর্শ সন্তান গঠেনে এবং পিতামাতার সাথে সন্তানদের সু-সম্পর্ক অটুট রাখতে কতটা জরুরি। পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও অন্য কোনোভাবে এটি অতো ভালো করে জানা সম্ভব হয় না। এর ফলে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে বিশাল একটা ঘাটতি থেকে যায় যেটার ক্ষতিকর প্রভাব বাংলাদেশের পরিবার গুলোতে ব্যাপকভাবে বাড়ছে এবং পরিস্থিতি দিনের দিনের পর খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই আমাদের উচিত এই বিষয় জ্ঞানার্জন এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে এবং আশেপাশের মানুষদের সতর্ক করা। এর জন্য বিভিন্ন বই, আর্টিকেল, সরাসরি প্রশিক্ষণ, ইউটিউবে পরামর্শ শুনতে পারেন,পড়তে পারেন।
[বর্তমানে যেই ১০ টি কাজ দক্ষতা থাকলে কাজের অভাব হবে না আপনার ,জানতে এখানে ক্লিক করুন]
গুড পেরেন্টিং শিক্ষার জন্য বইঃ
বর্তমানে এই বিষয়ে মানুষ সতর্ক হতে শুরু করেছে। এসব বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখালিখি হচ্ছে। এবং অনেক বই প্রকাশিত হচ্ছে। এই বই গুলো থেকে কেউ ধারণা নিলেও অনেক বেশি উপকৃত হবেন। নিচে কিছু বইয়ের নাম দেয়া হচ্ছে।
*মুসলিম প্যারেন্টিং
লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আব্দুল বারি
গার্ডিয়ান পাবলিকেশন
*স্মার্ট প্যারেন্টিং উইথ মুহাম্মাদ সাঃ
লেখকঃ মাসুদ শরীফ
গার্ডিয়ান পাবলিকেশন
প্রাপ্তিস্থানঃ রকমারি এবং দেশের লাইব্রেরি সমূহ
"প্যারেন্টিং" এই আধুনিক যুগে আমার সন্তানকে কিভাবে মানুষ করবো ?
লেখকঃ আমির জামান, নাজমা জামান
প্রাপ্তিস্থানঃ দেশের বড় বড় লাইব্রেরি
এছাড়াও পিডিএফ পড়তে পারেন এখান থেকে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হয়ে।
সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার উপকরণ/ কৌশলঃ
সন্তানকে বই পড়তে আগ্রহী করে তুলুনঃ-
বই হচ্ছে আপনার সন্তানকে আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম উপকরণ। ছোট বেলা থেকেই সন্তানকে বই পড়তে দিন, বই পাশে রাখুন। কখনো আপনি নিজে বই পড়ে শুনাতে চেষ্টা করুন। আবার কখনো সন্তানের কাছ থেকে শুনুন। ভালো বই খুঁজে তাকে উপহার দিন। বই প্রেমী হিসেবে তৈরী করুন। জানতে চেষ্টা করুন কি কি বিষয় তার ভালো লাগে পড়তে। কেমন বই পড়ছে, কয়টা পড়ছে এসব নিয়ে আলোচনা করুন। তারপর বইয়ের কোন অংশটি ভালো লেগেছে সেটা জানুন। সন্তানের পছন্দের বই তাকে উপহার দিন। প্রয়োজনে বাসায় ছোট লাইব্রেরি করেন। লাইব্রেরিতে নানান ধরনের বই রাখুন৷ যাতে বহু জ্ঞানের উন্মেষ ঘটে আপনার সন্তানের মাঝে। এভাবে সন্তানের বইয়ের প্রতি সম্পর্ক গড়ে তুলে দিন।
বিনোদনের ব্যবস্থা রাখুনঃ
মাঝে মাঝে ঘুরতে যান বেড়াতে যান যাতে করে সন্তানের একঘেয়েমি না হয়ে উঠে। এতে করে মানসিক প্রশান্তি আসবে। সবকিছুতে মনোযোগী হয়ে উঠবে। পড়াশোনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠবে। লাগাতার একই কাজে ব্যস্ত রাখেবন না এতে করে তাদের লাভের চাইতে ক্ষতি বেশি হবে।
খেলাধুলার ব্যাপারে উৎসাহিত করুনঃ
খেলাধুলা প্রত্যেক শ্রেনীর মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এতে করে মানুষের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থ থাকা সম্ভব হয়। খেলাধুলার ফলে তারা নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন হবে। মানসিক উন্নয়ন হবে। কাজের প্রতি একাগ্রতা আসবে। এর ফলে হয়তো পড়াশোনার একটু বিঘ্নিত হবে তারপরেও খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত রাখতে চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে সাইকেল, ব্যাট, বল কিনে দিন৷ সম্ভব হলে তাদের সাথে নিজে খেলাধুলা করুন।
আদর্শ সন্তান গঠনে ধর্মীয় শিক্ষা দিনঃ-
আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম মাধ্যম উপাদান হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়া। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এটি একটি আত্মিক উন্নয়নের উপকরণ। আপনি যেই ধর্মের ই হয়ে থাকেন এতে কোনো সমস্যা নেই। সকল ধর্মেই মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া হয়েছে৷ ধর্মীয় শিক্ষা কোনো দায়বদ্ধতা ছাড়াই মানুষের মধ্যে মমত্ববোধ জাগ্রত করে ।
শিশুকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিশুর ব্যক্তিত্ব, আচার আচরণ গঠন ও সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গুড প্যারেন্টিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শুড প্যারেন্টিং হচ্ছে সন্তানের সাথে পিতামাতার যুক্তি সম্মত গ্রহণযোগ্য,সমঝোতাপূর্ণ সম্পর্ক। এজন্য পিতা-মাতা হিসেবে ভূমিকা পালনের সময় সচেতন হতে হবে। পিতামাতা শিশুকে কিভাবে পরিচালনা করবেন সে সম্পর্কে পিতামাতা ধারণা থাকতে হবে। পিতা-মাতা হিসেবে শিশুর প্রতি কতগুলো করণীয় দায়িত্ব থাকে। যা সন্তানের সাথে পিতামাতার যুক্তি সম্মত গ্রহণযোগ্য,সমঝোতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী করে। আর আজকে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। সর্বশেষ আলোচনা থাকবে ইসলামের দৃষ্টিতে পিতা-মাতার উপর সন্তানকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব এবং গুরুত্ব। সন্তানকে কিভাবে বেড়ে উঠতে দিলে একজন ভালো মানুষ হিসেবে তৈরী করা সম্ভব সে বিষয়েও আলোচনা থাকবে। প্রথমে স্বাভাবিক আলোচনা এবং সমসাময়িক আলোচনা থাকবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
যেমনঃ
১. শিশুর নিরাপত্তা প্রদান এবং মৌলিক চাহিদা পুরণ সন্তানের নিরাপত্তা বিধান করা ও মৌলিক চাহিদা মেটানো প্রত্যেক পিতা-মাতার গুরু দায়িত্ব। স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ রাখা, অসুস্থ অবস্থায় সেবা করা, কোন সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধান করা।
২. সামাজিকীকরণ শিক্ষা প্রদান সন্তানকে সামাজিকতা শিক্ষা দেয়া পিতা-মাতার দায়িত্ব। সমাজে চলার কিছু নিয়ম কানুন থাকে। সামাজিক বিকাশের জন্য নিয়ম-কানুন ও ন্যায়-অন্যায় শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পিতা-মাতার।
৩. উষ্ণতা প্রদান - পিতা-মাতার নৈতিক দায়িত্ব সন্তানকে ভালোবাসা ও স্নেহ মমতার বন্ধনে আবদ্ধ করা ও সুশিক্ষা প্রদান। এইক্ষেত্রে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়। সন্তানকে স্নেহ, ভালোবাসা ও মমতার বন্ধনে আবদ্ধ করলে সন্তান বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় বিশ্বাসের ভিত্তি মজবুত হয়।
৪. সন্তানের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মানো শিশুর মধ্যে আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাস ও স্বনির্ভরতা জাগিয়ে তুলতে হবে। তাহলে যে কোন সমস্যা শিশু মোকাবেলা করতে পারবে। শিশুর মধ্যে নিজের সুরক্ষা,আত্মসচেতনতা ও স্বাতন্ত্র্য থাকবে কিন্তু তা অন্যের জন্য ক্ষতির কারন হবে না।
৫. ধৈর্য্য ধারনের শিক্ষা ধৈর্য্য ধারনের শিক্ষা শিশুকে স্থিতিশীল করে।
৬. দ্বায়িত্বশীল হতে শিখানো কেবল নিজের ভালো বা কল্যান ও অন্যের আদর ভালোবাসা পাওয়ার কথা চিন্তা করলে চলবে না । ছোট বেলা থেকেই শিশুর মধ্যে দায়িত্ব বোধ বা দায়িত্ব নেয়ার মনোভাব গঠন করতে হবে। অন্যের ভালোবাসার বিনিময়ে শিশু ও অন্যকে ভালোবাসবে, শ্রদ্ধা, ভক্তি করবে।
৭. সন্তান সত্য, সুন্দর, কল্যানের স্বপক্ষে যেন সন্তান বেড়ে উঠে সে দিকে লক্ষ রাখা। নম্রতা, শিষ্টাচার, সদাচার ইত্যাদি শিক্ষা পরিবার থেকেই দিতে হবে।
৮. কর্মের মাধ্যমে সন্তান যাতে সব কিছু অর্জন করে। প্রলোভন ও বিলাসিতার মধ্যে সন্তান বড় করা আত্নঘাতী।
৯. বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনের সময় সর্বদা সন্তানের পাশে থাকতে থাকতে হবে। সঠিক আইডল খুঁজে পেতে শিশুকে সাহায্য করতে হবে। হবে। তার সামনে আদর্শ আইডল ১০. সন্তানকে সবার সাথে মিলেমিশে বড় হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। উগ্র মতবাদ ও অনগ্রসর চিন্তা থেকে সন্তানকে দুরে রাখতে হবে।
১১. সংস্কৃতি, কৃষ্টি, শিল্পমনস্ক মনোজগতৎ মানবচিত্তকে সুস্থ ও সবল রাখে। সন্তানর মধ্যে খেলাধুলা, সঙ্গিত, নৃত্য, বি, কবিতা ও গল্প দেখা, ছবি আঁকা, বিজ্ঞান মেলা, সূচিকর্ম সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল কাজের আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। ১২. নিজের মতামত শিশুর উপর চাপিয়ে না দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভালো মন্দ দিক বিচার বিবেচনা করে সন্তানকে সাথে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনস্তত্ত্ববিদ জেমস লেম্যানের মতে, " সস্তানের সামনে আপনিই রোল মডেল। আপনিই হিরো। আপনার মাঝেই সে খুঁজবে নিজেকে। কাজেই মডেল হিসেবে আপনার দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে প্রখর সজাগ থাকার কোনো বিকল্প নাই।” মার্কিন চিকিৎসক ও লেখক মেগ মিকার বলেন যে, প্রত্যয়ী মা-বাবা সন্তানের সামনে কঠিন কাজটি সুসম্পন্ন করে দেখান। অতঃপর সেই কাজে অংশ নিতে সন্তানকে আহ্বান করেন।
যেভানে সন্তানদের পরিচালনা করবেনঃ
সন্তান পরিচালনার ধরণ নিচে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হলো।
শিশু পরিচালনা / পিতামাতার কর্তৃত্বের ধরণ Parenting Types / Parenting style
শিশুকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গড়ে তোলা, শিশুর মধ্যে আস্থা ও আত্মবিশ্বাস স্থাপন করা ও ব্যক্তিত্ব সুগঠিত করার জন্য শিশু পরিচালনা পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। Diana Baumrind (১৯৭০, ১৯৭১) নার্সারী স্কুলের বালক বালিকাদের আচরণের উপর একটি গবেষণা করেন। তিনি শিশুদের মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক আচরণ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ করেন। এই ক্ষেত্রে Baumrind মত প্রকাশ করেন যে, পিতামাতার পরিচালনার ধরণ শিশুর মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক আচরণ বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এরপর তিনি পিতামাতার কর্তৃত্বের বিভিন্ন ধরণ পর্যবেক্ষণ করেন এবং তিনটি মৌলিক ধরণ চিহ্নিত করেন।
১. স্বৈরতান্ত্রিক পিতামাতা (Authoritarian )
২. কর্তৃত্ব পরায়ণ পিতামাতা (Authoritative)
৩. স্বীকৃত / অনুমোদনকারী পিতামাতা (Permissive)
নিম্নে বিভিন্ন ধরনের শিশু পরিচালনা পদ্ধতি বা শাসন পরিচালনার ধরণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো এর ফলাফল পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে ধাপে ধাপে।
1.স্বৈরতান্ত্রিক/ শাসনতান্ত্রিক ( Authoritarian); শিশুর উপর পিতামাতা উচ্চমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। শিশুদের পিতামাতার কথা মত চলতে বাধ্য করা হয়। কঠোর শাসন পরিচালনাকে পিতামপতা পরিবারের ঐতিহ্য হিসেবে মনে করে। শিশুরা যদি পিতামাতার আদেশ মানতে না চায় তা হলে কঠোরভাবে তা দমন করা হয়।
★★পিতামাতার আচরণের অনুযায়ী শিশুর প্রতিক্রিয়া যেমন হয়।
প্রথম অংশে পিতামাতার আচরণ এবং দ্বিতীয় অংশে সেই আচরণে শিশুর প্রতিক্রিয়া বলা হলোঃ
১- শিশুকে যদি সর্বদা কঠোর শাসন, বাঁধা নিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়-- তখন সকল বিষয়ে শিশু শীতল অনুভূতি দেখায়, আগ্রহের অভাব দেখা যায়।
২- আদেশ না মানলে বা নিয়ম ভঙ্গ করলে যদি শাস্তি দেওয়া হয়-- ★অবিশ্বাস স্থাপন হয়। শিশু ভাবে পিতা মাতা তাকে স্নেহ করে না।
★ যদি শিশুর আবেগ, অনুভূতিকে উপেক্ষা করা হয়-- ★শিশু সর্বদা জড়তা, ভীরু,নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
★যদি আচরণকে কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শিশুকে ধমক দেওয়া, প্রহার করা হয়-- ** সমবয়সীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না।
★যদি শিশুর পছন্দকে উপেক্ষা করা হয়-- **নিজেকে সর্বদা অসুখী মনে করে।
★যদি শিশুর কাছে অতিরিক প্রত্যাশা করা, প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে সমালোচনা, উপহাস করা হয়---**অনেক শিশু শাসনের ভয়ে পড়াশুনা করে ফলে স্কুলের ফলাফল ভালো হয়। আবার অনেক শিশু বড় হয়ে আক্রমণাত্বক আচরণ করে
২. কর্তৃত্ব পরায়ণ (Authoritative) / গণতান্ত্রিক ( Democratic )
সন্তানকে যুক্তিসম্মত, গ্রহণযোগ্য, সমঝোতাপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান, পরিমিত নিয়ম ও নির্দেশনা দ্বারা সন্তানকে পরিচালনা করা হয়। পিতামাতার প্রত্যাশার কথা শিশুকে জানানো হয় এবং সুনিয়ন্ত্রিতভাবে শিশুকে পরিচালনা করা হয়। সন্তানের চিন্তা ভাবনা, আচরণকে গুরুত্ব সহকারে বোঝার চেষ্টা করা হয়। শিশু স্নেহ, ভালোবাসা ও আবেগীয় দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। "develop a close bonding with the child" অর্থাৎ পিতামাতা শিশুর প্রতি আবেগীয় অনুভূতি অনুভব করে এবং শিশু ও পিতামাতার প্রতি অনুভূতিশীল হয়। অর্থাৎ পরিবারে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করে। শিশুর মধ্যে বোধ সৃষ্টির ক্ষেত্রে teachable moment কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। উপযুক্ত বয়সে শিশুর মধ্যে শৃংখলা বোধ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে শিশুর পছন্দ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকে মূল্য দেওয়া হয়। ফলে সন্তান গ্রহনযোগ্য আচরণ করতে শেখে এবং আস্তে আস্তে তাকে স্বশাসনের দিকে চালিত করাহয়।
নিচে পিতামাতার কিছু আচরণের উল্লেখ করা হলো প্রথম অংশে এবং দ্বিতীয় অংশে শিশুর প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করা হলো।
প্রথম অংশ--
যদি.........
• শিশুর অনুভূতি, চিন্তা ও শিশু যা আশা করে তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
• সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিশুর সাথে আলোচনা করা হয়। শিশুর সাথে ভালো ব্যবহার ও সহযোগিতামূলক আচরণ করে।
• শিশুর চাহিদার প্রতি পিতামাতা বেশ যত্নশীল হয়। শিশুর চাহিদা ও প্রত্যাশার সাথে সমন্বয় সাধন করা হয়।
• শিশুর ভুল আচরণে রাগ প্রকাশ না করে সংশোধন করা হয়।
• শিশুরা ভালো কাজ করলে স্বীকৃতি স্বরুপ পুরস্কৃত করা হয় ও অন্যায় কাজ
করলে শাস্তি দেওয়া হয়।
• পরিবারে আনন্দদায়ক পরিবেশ বজায় থাকে, মা বাবা ও ছেলেমেয়ের সাথে আবেগীয় সম্পর্ক দৃঢ় হয়।
★★দ্বিতীয় অংশ শিশুর প্রতিক্রিয়া
• শিশু সুখী হয়, আত্মবিশ্বাস অর্জন করে, নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে।
• শিশু সামাজিক হয়, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে ও মানসিক স্থিতিশীলতা থাকে।
• সহযোগিতা, সহানুভূতিশীল ইত্যাদি। মানবিক আচরণের বিকাশ ঘটে।
• কর্মচঞ্চল হয়, নিয়মকানুন মেনে চলে ও সকল কাজে কৃতিত্ব অর্জন করে।
• শিশুর মধ্যে সৃজনশীল ক্ষমতা বিকাশ লাভ করে। জীবনে সাফল্য অর্জন করে।
• শিশু ও পিতামাতার মধ্যে গ্রহণযোগ্য ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ থাকে।
• শিশুর চরিত্র সুগঠিত হয়। শিশু পিতামাতার আদেশ পালন করে। শিশু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
• বন্ধুত্বপূর্ণ, শ্রদ্ধা, স্নেহ ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়। শিশু সুখী হয়।
Diana Baumrind এর গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যে, পিতামাতার কর্তৃত্ব পরায়ণ ( Authoritative) শিশু পরিচালনার জন্য সহায়ক।
৩-অনুমোদনীয় মনোভাব (Permissiveness) পিতামাতা শিশুর প্রতি সর্বদা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। পিতামাতা শিশুকে গ্রহণ করে কিন্তু শিশুর কোন বিষয়ে নিজেদের জড়িত করে না। কারণ পিতামাতা সর্বদা নিজের পেশা ও সামাজিক কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে। শিশুর চাহিদা পূরণ করে কিন্তু পিতামাতা শিশুকে সময় দেয় না। কোন নিয়ম শৃংখলা আরোপ করে না। ফলে শিশু নিজের ইচ্ছা মত চলে।
প্রথম অংশে পিতামাতার আচরণ এবং দ্বিতীয় অংশে শিশুর প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করা হলোঃ
প্রথম অংশঃ
• শিশুকে অতিরিক্ত স্বাধীনতা দেওয়া হয়।
• শিশুর প্রতি যথাযথ নজর থাকে না।
• নিয়মতান্ত্রিকভাবে শিশুকে পরিচালনা করা হয় না। শৃংখলার ক্ষেত্রে শৈথল্য প্রদর্শন
করা হয়।
•শিশুকে তার মত করে বেড়ে উঠার সুযোগ দেয়া হয়, শিশুর আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় না।
দ্বিতীয় অংশ শিশুর প্রতিক্রিয়াঃ
শিশুর প্রতিক্রিয়াঃ
•শিশু স্বার্থপর, জেদি, অবুঝ ও ঝগড়াটে স্বভাবের হয়।
•শিশু আক্রমণাত্মক আচরণ করে।
• শিশু নিজের ইচ্ছামত সিদ্ধান্ত নেয় যা ঐ বয়সের জন্য প্রযোজ্য নয়।
• অমিতব্যয়ি, উশৃংখল ও বেয়াদপ হয়। •শিশুর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পায়।
•পরীক্ষার ফলাফল ভালো হয় না।
৪। প্রত্যাখান ( Rejection / Uninvolvement) এই হেপির পিতা-মাতা সন্তানের প্রতি কম অনুভূতিশীল থাকে এবং শিশুর প্রতি পিতা মাতার আগ্রহ, দায়িত্ববোধ ও প্রত্যাশা অনেক কম থাকে। শিশুর সামনে পিতামাতা ঝগড়া, অসৎ আচরণ করে ফলে শিশু বিশৃংখলা ও হতাশাপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে উঠে। মা-বাবার দাম্পত্য জীবনের অশান্তি, বিশৃঙ্খল জীবন যাপন, নিজের পেশাগত কাজের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ, একান্ত ব্যক্তিগত উন্নয়ন ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করে না। শিশুর সাথে প্রত্যাখানমূলক আচরণ করা হয় । সন্তানকে খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয় দেওয়াই কেবল দায়িত্ব মনে করে।
প্রথম অংশে এই অবস্থায় পিতামাতার কিছু আচরণ এবং দ্বিতীয় অংশে শিশুর প্রতিক্রিয়া আলোচনা করা হলোঃ
প্রথম অংশঃ
• যদি শিশুর উপর প্রত্যাশা ও চাহিদা হ্রাস পায়।
• পিতামাতা যদি শিশুর চাহিদা, পছন্দ, আদর, স্নেহ ইত্যাদির প্রতি উদাসীন থাকে। শিশুর পড়াশুনা, বাড়ীর কাজ, সামাজিক আচরণ ও স্কুল সংক্রান্ত কাজের প্রতি কোন নির্দেশনা না দেয়া হয় । শিশুর সকল বিষয়ে আগ্রহ কম।
দ্বিতীয় অংশঃ
•• শিশু হতাশা ও বিষণ্ণতায় ভোগে।
•শিশুর মধ্যে সমস্যাময় আচরণ দেখা যায়। নখ কামড়ায়, বড় হয়েও বিছানা ভেজায়। নিরাপত্তাহীনতা ও অসহায় বোধ করে।
•আত্মবিশ্বাস অর্জিত হয় না। বড় হয়ে মাদকাসক্তি, অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫। অতি রক্ষণশীলতার ফলাফল (Over protectiveness )
পিতামাতা সন্তানকে অধিক মাত্রায় আগলে রাখে। অনেক সাধনার ফলে সন্তান লাভ, সন্তানের প্রতি অতি উচ্চাশা ও স্নেহ-ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে পিতামাতা সন্তানের উপর রক্ষণশীল আচরণ করে থাকে। সন্তানের সকল কাজ করে দেয়। সন্তান পিতামাতার উপর নির্ভরশীল হয়ে পরে।
এই অবস্থার প্রথম অংশে পিতামাতার আচরণ এবং দ্বিতীয় অংশে শিশুর প্রতিক্রিয়া আলোচনা করা হলোঃ
পিতামাতা সব সময় শিশুকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকে।
• যত্ন ও স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে শিশুকে চলার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম অবলম্বন করে।
• পিতামাতা শিশুর স্বাধীন চলাফেরায় বাঁধা প্রদান করে।
• সর্বদা শিশুকে আগলে রাখে।
দ্বিতীয় অংশ শিশুর প্রতিক্রিয়াঃ
•সন্তান পিতামাতার উপর নির্ভরশীল থাকে।
• নিজে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
• হীনমন্যতায় ভোগে।
• ভীরু প্রক্রিতির হয়।
• বড় হয়ে অনেক সময় অপরাধ প্রবণ হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে পিতা-মাতার উপর সন্তানকে আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার গুরুত্বঃ
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তান হচ্ছে অনেক বড় একটি নেয়ামত। সন্তানের উপর নির্ভর করে পিতা-মাতার সুখ-সমৃদ্ধি এবং ভালো থাকার নিশ্চয়তা। আর সন্তানকে একজন আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে মা-বাবা ই। তাই সন্তানের জন্মের পর থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত পিতামাতার সবচেয়ে বেশি গুরুদায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে হবে। ছোট বেলা থেকেই যদি সন্তানকে সুশিক্ষা না দেয়া হয় বড় হলে সেটা কোনোভাবেই সম্ভব না। পিতামাতা কি পছন্দ করেন কি পছন্দ করবেন না সন্তানের জন্য সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই সন্তানদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে কিছু অভ্যাস গড়া তোলা আবশ্যক নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো।
*পিতা-মাতা তার নিজের পিতামাতাকে সম্মান করা,দেখাশোনা করা, শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা,অসুস্থ হলে সেবা করা সহ সকল কার্যক্রম নিজের সন্তানদের সামনে উউপস্থাপন করা সেটা হতে পারে সরাসরি কিংবা বুঝানো।
*সর্বদা সত্য কথা বলতে উপদেশ দেয়া এবং পর্যবেক্ষণ করা।
*ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা দেয়া এবং এর গুরুত্ব বুঝানো, জানানো।
• জীবনের সুখ-দুঃখ থাকবে। কষ্টের সাথেই থাকে সুস্থি।
• বড়দের সাথে আচরণ কেমন হবে।
• ছোটদের সাথে আচরণ কেমন হবে।
• বাবা-মা কে? তাদের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হবে। তাদের উপর সন্তানের দায়িত্ব কি কি। তাদের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হবে।
• ভাই-বোনের উপর অপর ভাই-বোনের সম্পর্ক কেমন হতে হবে।
• আত্মীয়স্বজন কারা,তাদের উপর দায়িত্ব কী অধিকার কী।
• প্রতিবেশী কারা? প্রতিবেশীদের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হবে।
• জীবনে পরিশ্রম কেন অনেক বেশি করতে হবে।
• পরিশ্রম ছাড়া কেন জীবনে উন্নতি নেই।
• পরিশ্রমের ফলাফল কী?
• কারো অধিকার নষ্ট করার পরিনতি কি।
• চুরি-ডাকাতি কেন করা যাবে না। এর পরিণতি কী।
• সন্তানের সাথে সু-সম্পর্ক অটুট রাখা।
• সন্তান যেন পিতামাতা কে ভয় না পায় আবার অমান্য ও না করে এমন পরিবেশ রাখা।
• সন্তান যেন তার যেকোনো মতামত, অভিযোগ নিঃসন্দেহে শেয়ার করতে পারে এমন পরিবেশ রাখা।
• ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া।
• ধর্মীয় বিশ্বাস অটুট রাখার পরিবেশ বজায় রাখা।
• সাহাবীদের জীবনের গল্প শুনানো। তাদের বিশ্বাস, ত্যাগ তিতিক্ষা, কষ্ট, পরিশ্রম এসবের শিক্ষা দেয়া।
• মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়া।
• অপরকে সম্মান দেয়ার গুরুত্ব শিক্ষা দেয়া।
• পরিশ্রমী হওয়ার মানসিকতা তৈরি করা।
• অভাব-অনটন দেখানো, এবং এই অবস্থায় কিছু সময় পারি দিতে শিক্ষা দেয়া।
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেগুলো সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। সেগুলো হলোঃ
১) আদর্শ সন্তানের জন্য পিতা-মাতার সৎ ও আদর্শবান হওয়া অপরিহার্য।
২) সন্তানদের জন্য আল্লাহর নিকট দুয়া করা।
৩) শিশুদেরকে ভুত-প্রেত, চোর-ডাকাত ইত্যাদির কথা বলে ভয় না দেখানো।
৪) শিশুদেরকে অন্যদের সামনে অপমান বা হেয় প্রতিপন্ন না করা।
৫) খারাপ বা অপ্রীতিকর শব্দ ব্যবহার করে তাকে সম্বোধন না করা। যেমন, নির্বোধ, অপদার্থ, গাধা, গরু, ছাগল ইত্যাদি।
৬) কোন ক্ষেত্রে ভুল হলে নম্র ও ভদ্রভাবে ভুল সংশোধন করা (বিশেষ করে প্রথম বার)
৭) সন্তানদের সাথে সমতা রক্ষা করা (স্নেহ, ভালবাসা বা কোন কিছু দেয়া..ইত্যাদি ক্ষেত্রে)
৮) দশ বছর বয়স হলে তাদেরকে আলাদা বিছানায় রাখা।
৯) তাদের নিকট দাম্পত্য জীবনের বিষয়াদি গোপন রাখা (সন্তান ছোট হলেও)
১০) শিশুদের সামনে মায়ের পাতলা, টাইট বা এমন পোশাক পরিধান না করা যাতে তার গোপনাঙ্গ সমূহ ফুটে উঠে।
১২) শিশুদেরকে অশ্লীল, নোংরা ছবি বা ফিল্ম দেখা কিংবা খারাপ গল্প, উপন্যাস ম্যাগাজিন ইত্যাদি পড়ার সুযোগ না দেয়া, এবং পর্যবেক্ষণ করা।
১৩) সাত বছর বয়স পূর্ণ হলে নামাযের আদেশ দেয়া এবং দশ বছর বয়স থেকে নামায না পড়লে হালকা ভাবে প্রহার করা।
১৪) সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়া, অসহায়কে সাহায্য করা, মেহমানকে সম্মান করা ইত্যাদি উত্তম চরিত্রের প্রশিক্ষণ দেয়া।
১৫) মিথ্যা, গালাগালি, নোংরা ও নিচু মানের শব্দ ব্যবহার না করতে অভ্যস্ত করা।
১৬) বাল্যবয়সে ইসলামের মৌলিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান দান করা। যেমন, ঈমান ও ইসলামের রোকন সমূহ, আল্লাহর ভয়, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, কুরআন পড়া, প্রয়োজনীয় দুয়া ও জিকির সমূহ ইত্যাদি।
এবং বিশুদ্ধ আকীদা নির্ভর দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা।
১৭) অন্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। যেমন, পিতা-মাত, ভাই-বোন, প্রতিবেশী, শিক্ষক, ক্লাসমেট, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ইত্যাদি।
১৮) সামাজিকতা শিক্ষা দেয়া। যেমন, সালাম দেয়া, বৈঠকে বসার ভদ্রতা, মানুষের সাথে কথা বলার ভদ্রতা, কারো বাড়িতে প্রবেশের আগে অনুমতি ইত্যাদি।
১৯) কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ইত্যাদি টেকনোলোজি ব্যবহারের আদব শিক্ষা দেয়া এবং এগুলোর অন্যায় ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করা।
২০) সর্বদা ভয়-ভীতি প্রদর্শন না করে তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা যাতে তারা তাদের যে কোন সমস্যা পিতা-মাতাকে বলতে পারে।
ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানদের সাথে সর্ব অবস্থায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার গুরুত্বঃ
নিজের সন্তানদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণ থাকা, তাদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেকেই এই ব্যাপারে সচেতন না এবং এটাকে যথাযথ গুরুত্ব দেই না। শুধু বড় বড় বিষয়গুলোতে যেমন সম্পত্তি দান করা বা বহুমূল্য উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, সন্তানদের আদর সোহাগ করার ক্ষেত্রে, তাদের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমতা রক্ষা করা উচিত।
হাদীসে এসেছে, একজন সাহাবী রসূল সা.-এর কাছে বসে ছিলেন। এই সময় তার ছেলে তার কাছে এলো, সাহাবী ছেলেটিকে চুমু খেলেন এবং নিজের কোলে বসালেন। একটু পর তার মেয়ে তার কাছে এলো। সাহাবী মেয়েকে তার সামনে বসালেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা দেখে বললেন, কত ভালো হতো তুমি যদি তাদের প্রতি সমান আচরণ করতে! -মুসনাদে বাযযার
আরেকটি হাদীসে এসেছে. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিরা কেয়ামতের দিন আল্লাহর পাশে নূরের মিম্বরে উপবিষ্ট থাকবে যারা তাদের শাসনকার্যে, পরিবার পরিজনের ব্যাপারে এবং তাদের ওপর অর্পিত কর্তব্যগুলোর ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণ থাকে। -সহিহ মুসলিম
আর বড় বড় ব্যাপারে তো সমতা রক্ষা করা ওয়াজিব। সন্তানদের মধ্যে একজনকে বিশেষভাবে বেশি সম্পত্তি দান করা বা বহুমূল্য উপহার দেওয়া বৈধ নয়। রসূল সা. এ রকম অসমতাকে জুলুম বলে অভিহিত করেছেন এবং এ সব ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করতে বলেছেন। -বুখারী, মুসলিম
সন্তানদের সাথে একই রকম আচরণ বা ন্যায়বিচার না থাকলে সন্তান ভুল পথে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে৷ এবং পিতামাতার প্রতি খারাপ মনোভাব পোষণ করতে শুরু করে। এভাবে একটা সময় পিতামাতাকে অমান্য করতে শুরু করে। তাই সকল সন্তানের সাথে একই রকম আচরণ খুবি জরুরী।
সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়ার গুরুত্বঃ
আপনি যে-ই ধর্মের ই হোন সন্তান কে ধর্মীয় শিক্ষা দিন। কোনো ধর্ম ই বাবা-মার সাথে খারাপ আচরণ করতে শেখায় না। মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করতে শেখায় না। চুরি-ডাকাতি, হত্যা করতে শেখায় না। সব ধর্মের আসল শিক্ষা হলো একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে সন্তান কে গড়ে তুলা। ধর্মের শিক্ষা ছাড়া কোনো সুস্থ সমাজ গড়ে উঠেনি। যারা ধর্মের সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলেন এবং চলার চেষ্টা করেব তাদের আদর্শগত অবস্থা আর যারা ধর্মহীন তাদের অবস্থা কিংবা যারা ধর্ম কর্ম পালন করে না ঠিক মতো তাদের অবস্থার অনেক তফাৎ রয়েছে। তাই ছোট বেলা থেকেই পিতামাতার উপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া।