আরবী বা ইসলামিক স্টাডিজের ক্যারিয়ার এবং সাবজেক্ট রিভিউ।

আরবী বা ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে পড়ে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ সুবিধা সমূহ



আরবি নিয়ে পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার প্লান

আরবী ভাষা হচ্ছে এমন এক ভাষা যেটা পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকে আজো চলমান। বর্তমানে বিশ্বে ৪২২ মিলিয়ন মানুষ আরবিতে কথা বলে। বিশ্বে আরবি ভাষাভাষির অবস্থান ৫ম। চিন্তা করুন বিশ্বে কত হাজার সক্রিয় ভাষা আছে।  তার মধ্যেও আরবী ভাষা বিশ্বে পঞ্চম।
 যেহেতু এত এত মানুষ এই ভাষার উপর তাদের ইতিহাস,সংস্কৃতি, সভ্যতা, রাষ্ট্রপরিচালনা সহ সব কাজ করে তাহলে অবশ্যই আমরা ধরে নিতে কোনো সন্দেহ নেই যে আরবি ভাষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।  জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ও আই সি সহ আরো বড় বড় সংস্থাগুলোর অফিসিয়াল ভাষা গুলোর মধ্যে আরবী ভাষা অন্যতম।  বুঝতে পারছি কি আমরা আরবী ভাষার পরিধি কত বড়?
 এ থেকে এ-ও বুঝতে পারি যারা আরবি নিয়ে পড়াশুনা করে উচ্চ শিক্ষত হবে ইনশাআল্লাহ  তাদের কর্মক্ষেত্রের  অভাব হবেনা দেশ বিদেশে।

তবে সেই কর্মক্ষেত্রের ক্ষাত গুলা জানা থাকলে ভালো।  চলুন জেনে নেয়া যাক আপনি কি কি করতে পারবেন আরবি নিয়ে পড়ে। বা ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে পড়ে।

 নিচে পর্যায়ক্রমে কিছু  কথা আলাদাভাবে আলোচনা করা হলো। যেটা আপনার ভালো লাগে সেটা আপনার টার্গেট হিশেবে স্থির  করতে পারেন নিঃসন্দেহে।


(ক্যারিয়ার নিয়ে আরো জানুন এখানে

 ১।আরবি পড়ে ক্যারিয়ার গড়ার গতানুগতিক  সুযোগ সুবিধা সমূহ 

১) মধ্য প্রাচ্যের অ্যারাবিক কান্ট্রিগুলোর দূতাবাসে জব করতে পারবেন
২) আমাদের দেশের ডাঃক্তারগণ মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে চিকিৎসা দেওয়ার আগে আরবী ভাষা শিখে, সেখানে তাদের টিচার হতে পারবে তবে এটা অস্হায়ী জব।
৩) বাংলাদেশের ৪/৫ টা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যারাবিক সাবজেক্ট আছে। ভালো রেজাল্ট থাকলে সেখানে জব করতে পারবে।
৪) বিসিএস দিয়ে জেনারেল ক্যাডারের যে কোন ক্যাডারে যোগ্যতা অনুযায়ী যেতে পারবেন
৫) বিশেষত শিক্ষা ক্যাডারে ইসলামিক স্টাডিজ সাবজেক্ট সেক্টরে জব পাবে।
৬) সরকারি মাদ্রাসাগুলোর অ্যারাবিকের টিচার হতে পারবেন বিসিএস দিয়ে। এক্ষেত্রে ইসলামিক স্টাডিজের স্টুডেন্টরা অ্যারাবিকে আসতে পারবেনা। কিন্তু অ্যারাবিকের স্টুডেন্টরা ইসলামিক স্টাডিজ সেক্টরে বিসিএস দিয়ে জব করতে পারবেন।
৭) আলিয়া মাদ্রাসাগুলোর আরবি প্রভাষক হতে পারবেন শিক্ষক নিবন্ধন দিয়ে।

আরবিতে অনার্স,মাস্টার্স করা যায় যেসব কলেজ ইউনিভার্সিটি থেকে দেখুন এখানে

২, আরবি পড়ার সুবিধা


যদি আরবি বা ইসলামিক স্টাডিজ  বিভাগের চাকুরির বাজার নিয়ে বলতে যাই তবে বলতে হয়, বাংলাদেশের চাকুরির বাজারে সাবজেক্ট অনুযায়ী ক্যারিয়ার বলতে কিছু নেই। তবে কয়েকটি সাবজেক্ট ছাড়া। যে কয়টা আছে তাও সামান্য বলা যায়। চাকুরি সম্পূর্ণ নিজের বিভিন্ন এক্সট্রা কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে। কলা অনুষদে অন্যান্য সাবজেক্ট পড়ে যেমন বিসিএসে ছাত্ররা যেতে পারে তেমনি আরবি বিভাগে পড়েও যেতে পারে। তাছাড়া বিসিএসে চাইলে আরবি বিভাগ থেকে ছাত্ররা ১৮ বা তার বেশি ক্যাডার থেকে যে কোনো ক্যাডেট চয়েস করতে পারবে।
নিজের পরিশ্রম আর কোয়ালিটি মূল ব্যপার।

তাছাড়া আরবি বা ইসলামিক স্টাডিজ  বিভাগের ছাত্রদের জন্য রয়েছে কিছু এক্সট্রা সুযোগ, যেমন বাংলাদেশের প্রতিটা মাদ্রাসায় আরবি প্রভাষক পদে নিয়োগ হতে পারে, যে সমস্ত কলেজে  এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি রয়েছে সেখানেও সুযোগ প্রফেসর পদে নিয়োগ হওয়ার। তাছাড়া আরব রাজ্য বা মধ্যপ্রাচ্যে তো আরবি বিভাগের চাকুরির বাজার রয়েছে। বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি গুলো থেকে অফার আসে। তবে সে জন্য দক্ষ লোক লাগে।
 সর্বক্ষেত্র কোয়ালিটি আর যোগ্যতাই মূল বিষয়।


(গ) আরবি ভাষা জেেনে আরো যা পারবেন 

আরব দেশে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বিভিন্ন ব্যবসা করে। যদি কারো ইচ্ছে থাকে  বড় মাপের ব্যবসায়ী হওয়া। তাহলে আরব দেশে ব্যবসা করা গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা।  আরব্য শেখদের সাথে ব্যবসার মাধ্যমে বাংলাদেশের আরব্য বণিক হওয়া যেতে পারেন। তারপর এরাবিয়ান মেয়েকে বিবাহ করে নিজের বিজনেসকে আরও পাকাপোক্ত করাও যেতে পারে। কারণ চাইলেই আরব মেয়েদের বিয়ে করা সম্ভব যদি আরব দেশে থাকার ইচ্ছে থাকে।
যেহেতু আরব মিডলইস্ট হচ্ছে টাকার খনি তাই আপনি চাইলে অনেক কিছুই করতে পারছেন ব্যবসা করে।
তখন আপনার যদি নিজস্ব কোনো কোম্পানি থাকে কিংবা কোনো  কর্মসংস্থান যেখানে আপনি তো প্রধান হতে পারবেন সাথে বাংলাদেস কিংবা অন্য দেশ থেকে অল্প টাকায় শ্রমিক নিতে পারবেন।  সাথে সাথে মুক্তি করতে পারেন বাংলাদেশি হাজারো বেকার যুবকদের।

এর সাথে যদি আপনি একজন একনিষ্ঠ মুসলিম হতে পারেন কিংবা সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবসা করতে পারেন তাহলে তো আল্লাহ ই আপনার সাথে। আবার চাইলে নিজস্ব পরিচালনায় থাকতে পারে একাধিক মসজিদ-মাদরাসা এবং ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
আর এভাবেই আপনি দুনিয়া এবং আখেরাতে হয়ে উঠতে পারবন  একজন সফল ব্যক্তি।
ربنا آتنا في الدنيا حسنة و فى الآخرة حسنة و قنا عذاب النار.


(ঘ)

একটা জিনিস মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে,

রাজার আসনে বসেও যদি মাথায় কিছু না থাকে,তবে মূল্য নেই ওই আসনের।

আবার,আদার ব্যাপারি হয়েও যদি জাহাজের খবরাখবর রেখে একটা কুরিয়ার সার্ভিস খোলা যায় সেটাও অনেক।


টার্গেট,সম্ভাবনা ইত্যাদি খুব ভারী ভারী শব্দ। এ ক্ষেত্রে অন্যদের মত টার্গেট না নিয়ে যদি আপনি কি চান সেটা ধরে এগিয়ে যান তবে আপনার ক্যারিয়ারের রাস্তাটা আরো সহজ হবে।
এই যে মানুষজন ইংরেজী,বাংলা সাহিত্য নিয়ে এতো অহংকার করে,তারা আদৌ জানে কিনা যে আরবী সাহিত্যের মান কত উচু!

একটা জিনিস বিশ্বাস করলে আসলে এই পৃথিবীতে আর কোনো কষ্ট বা আফসোস থাকে না।সফলতার আসল সংজ্ঞা জানা আছে? কোরআনে সফলতার সংজ্ঞা খুব ভালো করে দেয়া আছে।ওটাই চূড়ান্ত সফলতা।সো,এই যে আমাদেরকে বলা হচ্ছে,সফলতার পিছনে দৌড়াও,সফলতাও পিছনে দৌড়াও,এইটা একটা মরীচিকা মাত্র।

চাকরী ক্ষেত্রে একটা জিনিস চিন্তা করা যাক।
কেউ চায় টাকা,কেউ চায় সম্মান,কেউ নিজের মতই চলতে থাকে।

টাকা উপার্জনের আগে ভাবতে হবে মনের শান্তিটা কিভাবে পাওয়া যায়।যদি এই উত্তরটা খুজে বের করা যায়,তাহলে আর চিন্তা করতে হয় না।

আর চাকরির বাজার হিশেবে বাংলাদেশে বিষয়ভিত্তিক কোন চাকরি নাই বললেই চলে।
বিসিএস ব্যাংক চাকরি এটা সবার জন্য উন্মুক্ত।

আপনি চাইলে পেশাগত টার্গেট হিশেবে একজন শিক্ষক হতে পারেন আরবী নিয়ে পড়ে। তা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ বা মাদ্রাসা।

ভালো আরবি পারলে দূতাবাসে ভালো চাকরি পাওয়া যায় সেটাও মাথায় রাখতে পারেন। বাংলাদেশে অবস্থিত দূতাবাস গুলো ভালো যোগ্যতাসম্পন্ন লোক খুজছে কিন্তু সরকার দিতে পারছেনা ঐ রকম লোক।

তারপর রিলিজিয়াস দিক তো আছে। বর্তমানে বাজারে অনুবাদ জনপ্রিয়। অনুবাদ করে বই বিক্রি করে হাজারো টাকা উপার্জন করতে পারেন আপনি। কারণ বিশ্বজুড়ে এমন অনেক লেখকের আছে অনেক দামি দামি এবং প্রসিদ্ধ বই। এগুলো যদি আপনি অনুবাদ করতে পারেন তাহলে আপনার চিন্তার কারণ নেই ক্যারিয়ার নিয়ে। আরবি-ফারসি সাহিত্য সংস্কৃতির মান যে কত উঁচু তা কল্পনাতীত।
সুতরাং আপনি এটাকেও পেশা হিশাবে  নিতে পারেন।


(ঙ) আরবী বা ইসলামিক স্টাডিজ এর ফিউচার। 


তালার জন্য চাবি না বানিয়ে যদি চাবির জন্য তালা বানানো হয় তাহলে বিষয়টা কেমন হয়??
আমার দেশের শিক্ষাব্যবস্থাটা তদ্রুপ।একজন মানুষের সারা জীবনের স্বপ্ন সে ইকোনোমিস্ট,লয়ার কিংবা ফিলোসোফার হবে কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় সে পায় অন্য সাবজেক্ট। আপনার ক্যারীয়ার ঠিক করে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় বা  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।সেক্ষেত্রে "আপনার ক্যারিয়ার"।

ছোটবেলা থেকেই কেউ ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্ন করলে সাধারণত স্কিপ করেই আসে অনেকে ইভেন পরিবারের সাথেও।

(ক্যারিয়ার নিয়ে আরো পড়ুন এখানে, ২০২০ সালের তরুনরা সেরা যেই ২০ টি কাজ করে ঘরে বসে অনলাইনে আয় করতে পারে হাজার হাজার টাকা) 

তবে হ্যাঁ ভবিষ্যত সম্পর্কে  যতটুকু চিন্তাভাবনা করা খারাপ নয়। আরবি ভাষা অনেকটা রিলিজিয়াস টাইপের সে জন্যই আরবি সাবজেক্ট কে বেছে নেয়া সেক্ষেত্রে শিক্ষকতার চেয়ে ভাল কোন মাধ্যম কারো কাছে নাও হতে পারে। কারণ অনেকের ই স্বপ্ন থাকে শিক্ষক হওয়ার। যেখানে চিরকাল জ্ঞানচর্চার সুযোগ থাকে।

 যাদের  শিক্ষকতার প্রতি কিছুটা দূর্বলতা কাজ করে তাদের জন্য আরবি ভাষা নিয়ে পড়া এক মহা সুযোগ।

জব সেক্টরে জেনারেল স্টুডেন্টদের জন্য স্বীকৃত প্রায় সবগুলোতেই আরবি ডিপার্টমেন্টের ছাত্রদের সুযোগ রয়েছে।এক্ষেত্রে তেমন কোন বৈষম্যের সম্পর্ক জানা নেই। তাছাড়াও আরবি ভাষার সাথে রিলেটেড অ্যাম্বাসি,অনুবাদ,বিভিন্ন লেকচারারদের বক্তব্যের সাবটাইটেল বা মুভি/শর্টফিল্ম ডাবিং,মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি,মধ্যপ্রাচ্যের সাথে ব্যবসা,দোভাষি ইত্যাদি ইত্যাদি সুযোগ জেনারেলদের সাথে প্রতিযোগিতা ব্যতিরেকেই আপনার জন্য থাকছে।

আর যদি চান আপনি বাংলাদেশে থাকতে তাহলে মাদরাসাগুলো আপনার অপেক্ষায় অপেক্ষমাণ। ২০১৮ সালের ঢাকা ট্রিবিউনের এক রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে দাখিল-কামিল লেভেলের মাদরাসা প্রায় ৭,০০০+ এবং সেখানে শিক্ষক সংখ্যা ১,১৯,৫৮৭ জন। প্রতিষ্ঠান পার (১,১৯,৫৮৭÷৭,০০০=১৭ জন প্রায়) যেখানে আরো প্রায় ৪০-৪৫% শিক্ষকের ঘাটতি।তন্মধ্যে অভিজ্ঞ শিক্ষক মাত্র ২৫-৩০%। আমাদের বোনদের জন্য সুখবর হল মহিলা মাদ্রাসাগুলোতে মহিলা শিক্ষিকা মাত্র ৩০-৩৫% যার বাকি অংশ পুরুষ শিক্ষকদের দিয়েই চালাতে হচ্ছে শিক্ষিকা সংকটের কারণে। সুতরাং হতাশ হওয়ার কারণ নেই আরবি নিয়ে পড়ে।

এখন চাইলে আপনি আরবি বা ইসলামিক স্টাডিজ  নিয়ে পড়ে আপনার টার্গেট স্থির করতে পারেন যেটা আপনার পছন্দ।
১- শিক্ষকতা
২- দূতাবাসে দোভাষী হিসেবে যুক্ত হওয়া
৩- আলেম
৪- উদ্যোক্তা
৫- ব্যবসা
৬- অনুবাদক
৭- কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
৮- ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এ কাজ করা
৯.ব্যাংকার
১০. সাংবাদিক সহ আরো অনেক কিছু।

তবে সবার আগে যেই কথাটি বলেছিলাম সেই কথাটির সাথে সুর মিলিয়ে আরো কিছু কথা বলি। আরবি ভাষা হচ্ছে দুনিয়া এবং আখিরাতের একটি সার্বজনীন ভাষা।  এর সাথে মিশে আছে আল্লাহর রহমত।  এই পথে যদি আপনি নিজেকে রাখতে পারেন আল্লাহর  নির্দেশনা মেনে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ ই আপনার উত্তম ব্যাবস্থা কারী হয়ে যাবেন।  কেননা আল্লাহ ই উত্তম রিজিকদাতা। এর চেয়ে বেশি আর কি চাই?  আছে কিছু?





ইসলামিক ইস্টাডিজ কোথায় পড়ানো হয়?
ইসলামিক স্টাডিজ কোর্স
আরবি বিভাগ কোথায় কোথায় আছে? 
আরবি কোর্স 
যেসব কলেজে আরবি বিভাগ আছে
আরবি পড়ে ক্যারিয়ার গঠন
 



3 Comments

  1. ভাই, আরবিতে অনার্স করে ইসলামিক স্টাডিজের প্রভাষক হওয়া যাবে এ সংক্রান্ত কোন প্রজ্ঞাপন আছে কি? জানালে উপকৃত হব

    ReplyDelete
  2. ভাই, ইসলামিক স্টাডিজ কে যে কামিলের মান দেওয়া আছে সেই পজ্ঞাপনটির দরকার।থাকলে আমাকে দিয়েন।

    ReplyDelete
  3. বাংলাদেশে আরবিতে অনার্স করা যায় কোন কোন কলেজে জানালে উপকৃত হতাম

    ReplyDelete
Previous Post Next Post