স্লিপ প্যারালাইজ কি? কেন হয়?

ঘুমের মধ্যে বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইজ কি? কেন হয়?

স্লিপ পেরালাইজিয কি? কেন হয়? 



ঘুমের মধ্যে বোবায় ধরা এই বিষটির সাথে আমরা হয়তো অনেকেই পরিচিত। যাদেরকে এই বোবায় ধরে তারাই আসলে বলতে পারবে এর অবিজ্ঞতা।

প্রচণ্ড বিরক্তিকর এবং দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম ও হয় কারো কারো। আবার অনেকে হাত পা নড়াচড়া করতে পারেনা। এমনকি এমন ও হয় যে যখন বোবায় কাউকে ধরে ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ যদি বোবায় ধরা ব্যক্তিকে টাচ করে তখন সে স্বাভাবিক  হয়ে যাবে।

 বিশেষ করে রাতে ঘুমালে এই বোবায় ধরে। কখনো রাতে ঘুমানোর কয়েক মিনিটের মধ্যে এমনকি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেও ধরে থাকে কাউকে। এমন অনেক তথ্যই জানা যাবে যাদের বোবায় ধরে তাদের থেকে।

 অবাক হওয়ার মত ব্যাপার হলো,ধরুন আপনাকে  মাঝে বোবায় ধরে, সবসময় ধরে না। একদিন এমন হলো যে হঠাৎ আপনার বোবায় ধরা বিষয়টি শুধু মনে পড়ে যাওয়াতেই আপনাকে বোবায় ধরে ফেলেছে। মানে মনে না করলে হয়তো বেচেঁ যেতে পারতেন।
তবে আপনি এমন অনেক মতামত পাওয়া যায় বোবায় ধরা নিয়ে। চলুন যেনে নেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটাকে কিভাবে নেওয়া হয়েছে


চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় এই সমস্যাকে বলা হয় স্লিপ প্যারালাইসিস, বা ঘুমের মধ্যে পক্ষাঘাত।

স্লিপ প্যারালাইসিস হলে একজন ব্যক্তি কিছু সময়ের জন্য কথা বলা বা নাড়াচাড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। তখন  কিছুই করতে পারে না শুয়ে থাকা ছাড়া। এমনকি কথাও বলতে পারেনা।


এটি সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে ওই সময়টায় রোগী ভীষণ ঘাবড়ে যান, ভয় পেয়ে যান।

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সামান্থা আফরিনের মতে, বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস হল গভীর ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি একটি স্নায়ুজনিত সমস্যা।

ঘুমের ওই পর্যায়টিকে বলা হয় র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট-রেম।

রেম হলো ঘুমের এমন একটি পর্যায় যখন, মস্তিষ্ক খুব সক্রিয় থাকে এবং এই পর্যায়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে। যেকোনো স্বপ্নই হতে পারে।

কিন্তু সে সময় শরীরের আর কোন পেশী কোন কাজ করেনা। এ কারণে এ সময় টাতে মস্তিষ্ক সচল থাকলেও শরীরকে অসাড় মনে হয়। কোনো কিছুই যেন করতে পারেনা।

পর্যালোচনা করে দেখা যায় স্লিপ প্যারালাইসিস  সমস্যায় তরুণ-তরুণী এবং কিশোর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।


চলুন জেনে নেয়া যাক বোবায় ধরা কাদের হয়, কেন হয়ঃ


স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার নির্দিষ্ট কোন বয়স নেই। এই পরিস্থিতি যে কারও সঙ্গে যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা বা এনএইএস-এর তথ্য মতে তরুণ-তরুণী এবং কিশোর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।



স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার পেছনে কিছু কারণকে চিহ্নিত করেছে চিকিৎসকরাঃ


১. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব বা ছেড়ে ছেড়ে ঘুম হওয়া। অসময়ে ঘুমানো। অনেক সময় কাজের সময় নির্দিষ্ট না হলে, অথবা দূরে কোথাও ভ্রমনে গেলে এমন ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

২. মাদকাসক্ত হলে অথবা নিয়মিত ধূমপান ও মদপান করলে।

৩. পরিবারে কারও স্লিপ প্যারালাইসিস হয়ে থাকলে।

৪. সোশ্যাল অ্যাঙ্কজাইটি বা প্যানিক ডিসঅর্ডার বা বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক সমস্যা থাকলে।


এবার আমরা জানবো বোবায় ধরার লক্ষণ সমূহঃ

ডা. সামান্থা আফরিনের মতে এবং ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী স্লিপ পারালাইসিসের সাধারণ কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো হল:

১. বড় করে নিশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়। মনে হবে যেন বুকের মধ্যে কিছু চাপ দিয়ে আছে। দম বেড় হচ্ছেনা।

২. অনেকের চোখ খুলতে এমনকি চোখ নাড়াচাড়া করতেও সমস্যা হয়।

৩. অনেকের মনে হয় যে কোন ব্যক্তি বা বস্তু তাদের আশেপাশে আছে, যারা তার বড় ধরণের ক্ষতি করতে চায়।

৪. ভীষণ ভয় হয়। শরীর ঘেমে যায়।

৫. হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। অনেকের রক্তচাপও বাড়তে পারে।

৬. পুরো বিষয়টা কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

৭. এমন ও হতে পারে বোবায় ধরার পর স্বাভাবিক হলে শরীরে বা বুকে ব্যাথা অনুভব হওয়া। অথবা অনেক ক্লান্তি অনুভব হওয়া।

 তবে প্রভাবটি কেটে গেলে আগের মতো কথা বলা বা নড়াচড়া করায় কোনো সমস্যা থাকেনা। তারপরও অনেকে অস্থির বোধ করেন এবং পুনরায় ঘুমাতে যেতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।



এর চিকিৎসা:

স্লিপ প্যারালাইসিস আসলে গুরুতর কোনও রোগ নয়। মাঝে মাঝে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়।

মনকে চাপমুক্ত রাখার পাশাপাশি ঘুমানোর অভ্যাসে ও পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনলে অনেক ক্ষেত্রেই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

আবার অনেকের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় চলে গেলে আর এমন হয় না। এমনেতেই ঠিক হয়ে যায়।



(এই তথ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে আপনার ফেসবুক বা অন্য কোথাও শেয়ার করতে পারেন চাইলে)।

Post a Comment

Previous Post Next Post