মৌমাছির জীবনপ্রণালী। জেনে নিন অজানা তথ্য মৌমাছি সম্পর্কে।


পৃথিবীর সব থেকে রহস্যজনক এবং অদ্ভুদ প্রাণীটি মনে হয় মৌমাছি জেনে নিন অজানা তথ্য মৌমাছি সম্পর্কে




  হাজার হাজার বছড় ধরে মানুষের কাছে মৌমাছি চিল বুদ্ধিমত্তা বিহীন প্রাণী আমাদের দৃষ্টিতে এক প্রকার জৈবিক রোবট যারা শুধু আল্লাহ প্রদত্ত ভূমিকাই পালন করে এক শতাব্দী আগে অস্ট্রিয়ার ব্রনউইওঙ্কলে ধারণাটি ভুল প্রামাণিত হয়

শিশুকাল থেকেই কার্ল ভন ফ্রিস জানার চেষ্টা করতেন প্রাণীদের কাছে পৃথিবীটা কেমন তিনি পরীক্ষা করতেন,ছোট মাছগুলো রঙ কিংবা গন্ধ চিনতে পারে কিনা এবং সেগুলো ক্যামেরায় ধারণ করতেন
হাজার হজার বছর ধরে মানুষ  মৌমাছিদের অদ্ভুদ নৃত্য নথিভুক্ত করে এসেছেকিন্তু,কার্ল্ভনফ্রিশের পূর্বে কেউ ভাবেনি কেন মৌমাছি এরকম অদ্ভুতভাবে লাফালাফি করে


 ভন ফ্রিশ মৌমাছির প্রতিটি নাচের মুদ্রা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন। তিনি ফটোগ্রাফি এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে করে দেখিয়েছেন যে মৌমাছি দুই প্রকার নয়,মৌমাছি আসলে তিন প্রকার। প্রথম হলো,পুরুষ মৌমাছি।দ্বিতীয়টি হলো  স্ত্রী মৌমাছি। এই  মৌমাছিদের বলা হয় Queen Bee. এরা শুধু শুধু সন্তান উৎপাদন করা ছাড়া আর কোন কাজ করেনা। এই দুই প্রকার ছাড়াও আরো এক প্রকার মৌমাছি আছে। লিঙ্গভেদে এরাও স্ত্রী মৌমাছি তবে একটু ভিন্ন। পার্থক্য হল, আমরা জানি যে পুরুষ মৌমাছিরা মৌচাক নির্মান থেকে শুরু করে মধু সংগ্রহ সব করে থাকে কিন্তু এই ধারণা ভুল। পুরুষ মৌমাছিরা শুধু একটি কাজই করে,আর তা হলো কেবল রানী মৌমাছিদের প্রজনন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা। 

মানে সন্তান উৎপাদনে সহায়তা করা।এই কাজ ছাড়া পুরুষ মৌমাছির আর কোনো কাজ নেই। তিনি দেখালেন তৃতীয় প্রকার মৌমাছিরাই বাকি যত কাজ আছে তা করে থাকে। এরাও স্ত্রী মৌমাছি ,কিন্তু প্ররাকৃতিকভাবে এরা সন্তান জন্মদানে অক্ষম। বিজ্ঞানি ভন ফ্রিশ এই প্রকারের মৌমাছিদের নাম দিয়েছেন Worker Bee. এরা Queen Bee তথা  রানী মৌমাছির থেকে আলাদা একটি দিকেই আলাদা। সেটা হল রানী মৌমাছিদের কাজ হলো সন্তান জন্ম দেয়া আর নারী অন্য মৌন্মাছিদের কাজ সন্তান জন্ম ছাড়া বাকি অন্য সব কাজ। 



 বিজ্ঞানি ভন ফ্রিশ আরো একটি প্রমান করেছেন যে, এইসব মৌমাছিরা যখন ফুল থেকে রস সংগ্রহে বের হয়, তখন তারা খুব অদ্ভুত একটি কাজ করে। সেটা হলো, কোন কর্মী মৌমাছি কোন এক জায়গায় ফুলের উদ্যানের সন্ধান পেলে যেখান থেকে রস সংগ্রহ করা যাবে। তখন অই মৌমাছিটি তার অন্যান্য সঙীদের এই ফুলের উদ্যান সম্পর্কে খবর দেয়। মৌমাছিটি ঠিক সেভাবেই বলে যেভাবে সে যায়। এর একটু ও হেরফের হয়না। তিনি এই অদ্ভুত জিনিসটার নাম দিয়েছেন Waggle Dance….   

 তিনি একটি নির্দিষ্ট মৌচাকের একটি মৌমাছিকে চিনি মিশ্রিত পানি খেতে দেন মৌমাছিটি প্রহমে কিছু চিনি মিশ্রিত পানি খেয়ে নেয় এবং মৌচাকের দিকে রওনা হয় একই মৌমাছি কিছুক্ষুণ পর আবার ফিরে আসে ভন ফ্রিশ লক্ষ করেন কয়েক ঘন্টা পর ঐ মৌচাক থেকে দলে দলে মৌ আসতে শুরু করেছে অথচ অন্য কোনো মৌচাক থেকে একটি মৌমাছিও আসেনি

তিনি মধুর পরিবর্তে চিনি মিশ্রিত পানি ব্যবাহার করেছিলেন তাই মৌমাছিদের গন্ধ অনুভূতি এখানে কাজ করেনি ভন ফ্রিশ কয়েক কিলোমিতার দূরেও চিনি মিশ্রিত পানি স্থাপন করে একই ফলাফল পান কিন্তু কিভাবে অন্য মৌমাছিরা চিনির উৎস খুজে পেল? প্রথম মৌমাছিটির ন্ররত্যের মাঝে এক গোপন সংকেত লুকায়িত ছিল

হাজার বছর ধরে মানুষ মৌমাছির এই লাফালাফিকে অর্থহীন মনে করলেও এটি একটি জটিল বার্তা সংকেত গনিত,জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং সময় জ্ঞানের সমন্বয়ে এক নিখুঁত সমীকরণ আপনি জানলে অবাক হবেন মৌমাছিরা সূর্যের অবস্থানকে ব্যভার করে খাদ্যের উৎসের দিক নির্ণয় করে নৃত্যের দিক সূর্যের দিকে হলে খাদ্যের দিকও সূর্যের দিকেই এবং বিপরীত দিকে হলে খাদ্যের দিকও বিপরীত দিকে কৌণিক অবস্থানে হলে এদের নৃত্যের দিকও কৌণিক বরাবরঅই হবে মৌমাছির নৃত্যের ব্যাপ্তিকাল খাবারের উৎসের দূরত্ব নির্দেশ করে এবং এই পদ্ধতি পৃথিবীর যেকোনো মহাদেশে যেকোন সময়ের জন্য সত্য মানুষ ব্যতীত বুদ্ধিমান প্রাণী চিন্তা করলেই চোখে ভেসে ওঠে এলিয়েনের প্রতিচ্ছবি কিন্তু, আমাদের পাশেই এক অসাধারণ বুদ্ধিমান প্রানীর বসবাস যারা কিনা গণিতেও পারদর্শী
আজকের এই লিখাটির সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, বিজ্ঞানি ভন ফ্রিস মৌমাছির এই তত্বটির জন্য ১৯৭৩ সালে নোবেল পুরষ্কার পান। তবে এর চেয়ে মজার রহস্যের  ব্যাপার হলো এই তত্বটির ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ১৫০০ বছর আগেই বলে দিয়েছেন। কুর’আন মাজিদে মৌমাছির নামেই একটা সুরা আছে। নাম সুরা আন-নাহল। এই সুরার ৬৮ নাম্বার আয়াতে আছে।

  
বিঃদ্রঃ এই তত্বটির ব্যাপারে  বিস্তারিত জানতে পড়ুন লেখক আরিফ আজাদ লিখিত প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ১ এর ১৪৩-১৫১ পেইজে।

Post a Comment

Previous Post Next Post