অবসরে পড়ার মত একটি কবিতা। মানব দরদি কবিতা।



--------------"স্বর্গীয় ভালোবাসা"---------



মানুষ দিন দিন উচ্চতর শিক্ষার দিকে আগাচ্ছে এবং দেশে বিদেশে পারি জমাচ্ছে বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জনের জন্য। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো এই বড় বড় ডিগ্রিগুলো মানুষের ভিতরগত ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেনা। মানুষের দুঃখ ,কষ্টে তাদের হৃদয়ে বিন্দু পরিমান মায়াও জন্মায় না। মনে হয় শক্ত পাথরের মত হয়ে থাকে বড় বড় ডিগ্রিদারীদের আত্মাগুলো। এই করোনায় মহামারীতে তাদের লক্ষ কোটি টাকা হতে সামান্য টাকা গরীব দুঃখিদের জন্য ব্যয় করতে চোখ পাহাড় সমান উঠে যায়। অথচ কত গরীব দুঃখি রাস্তার দ্বারে দ্বারে হেটে বেড়ায় তাদের সামনেই। কি লাভ হবে হবে কোটি কোটি টাকা কৃত্রিম ভালোবাসার পিছনে খরচ করে?  এর থেকে কি কোনো  আসল সুখ লাভ সম্ভব হয় আদৌ? এই কথাগুলোর প্রেক্ষিতে এই কবিতাটি।

লেখকঃ মুহাঃ মুহিব্বুল্লাহ
শিক্ষার্থীঃঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


হাটছিলাম আনমনে রাস্তার দ্বারে,
চারপাশে দৃষ্টি দিয়ে হাটি হাটি পা পা করে।
কেউ হাসছে অট্টহাসিতে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে,
কেউ বা করছে দর কষাকষি এই এত দাম কেন রে?
 কেউ করছে বাজার সদাই  যা মনে চাহে।
চোখ পড়ে এক বৃদ্ধার দিকে রাস্তার কোণে,
চেয়ে আছে মোর দিকে কান্না মাখা ছলছল চোখে।
ভাবছি, কী হলো কে জানে?

এক হাতে তার এক ছেঁড়া ব্যাগ,
অন্য হাতে আঁচলে তার মুখ খানি ঢাকা,
জীর্ণশীর্ণ পোশাকে গাঁ টা তার আড়াল করা।
চোখগুলো যেন তার  জলে ভরা,
যেন বর্ষায় এক পুকুর-ডোবা।
হাত-পায়ের চামড়াগুলো দড়ির মত পাক খাওয়া।
পাশে গিয়ে দিলাম সালাম,
জিজ্ঞাসিলাম, কেমন আছেন বলে তাঁরে।
আমার জিজ্ঞাসাবাদে কান্না তাঁর আরো বাড়ে ততক্ষণে,
 বলে সে আমারে,
ভালো আছি, ভালো আছিরে বাপ মায়ামাখা কান্না স্বরে।
অবাক হয়ে বলিলাম তাঁরে,
ভালো যদি থাকেন ই বা এত কান্না কেন চোখে?
পেটে ভাত নাই আজ ক'টা দিন ধরে,
কাগজ কুড়িয়ে বিক্রি করতাম রোজ সকালে।
এই করোনায় সেটাও বন্ধ বিক্রি করতে পারিনা বলে।
ভিক্ষা আমি করতাম না বাপ,
পেটের জ্বালায় মরিয়া হয়ে তব দ্বারে আজ।
পেটের দ্বারে আড়াল করে দেখালো সে আমারে,
মস্ত এক বেল্ট বাধা তাহার কোমরে।

মুখে আমার স্বর নাই জিজ্ঞেস করলাম তবু,
ছেলেপেলে কি নাই এই ক্ষণেও?
নাই বাজান কেহ, থাকি ভাতিজির সাথে।

আমি কী দিবো সান্ত্বনা তারে,
খুঁজে পাইনি তখন এক্কেবারে।
বলিলাম তারে এইখানে আছে খানিকটা টাকা,
রেখে দিন যতন করে।

যখনি হাতটা বাড়িয়ে দিলাম তার দিকে,
হাউ মাউ করে কান্না হাসিতে বলে,
আল্লাহ তোরে বাঁচিয়ে রাখুক হাজার বছর ধরে।
মোর দিকে এগিয়ে এসে হাত বোলাইতে থাকে,
বলে সে,কেউ নাই দেখার মত মোরে।
বলিলাম তারে,
দোয়া করবেন শুধু মোর জন্যে।
সে মোরে ছাড়ছেইনা কান্না করছে পাগলের মত করে,
মনে হচ্ছে, কলিজায় তার তুলে রাখে মোরে।

বৃদ্ধাকে বিদায় দিয়ে ভাবছি,
পৃথিবীব্যাপী তো সবই কৃত্রিমতা,
কে তাহা নাহি জানে?
এই স্বর্গীয় ভালোবাসা নেয়না কেন মানুষ কুড়িয়ে?

Post a Comment

Previous Post Next Post