চাহিবার মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে - টাকার উপর কেন লিখা থাকে এই বাক্যটি?

 

টাকার উপর কেন লিখা থাকে "চাহিবার মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে "?

 


প্রথমে আমরা একটি গল্পের মাধ্যমে এই কারণ টি জানার চেষ্টা করবো। 



রাণী এলিজাবেথের সময় বাজার থেকে স্বর্ণমুদ্রাগুলো চুরি হয়ে যেতো। বাজারে স্বর্ণমুদ্রা ছাড়ার কিছুদিনের মধ্যে উধাও হয়ে যেতো। যার কারনে দেশ স্বর্ণ সংকটে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। সেজন্য রাণী তার অর্থ উপদেষ্টা গ্রেসামকে এর সমাধান বের করতে নির্দেশ দেন। গ্রেসাম স্বর্ণমুদ্রা বাঁচানোর জন্য কাগজের নোট প্রচলন করে। অর্থ্যাৎ বাজারে ৫০০ টাকার নোট ছাড়ার আগে ৫০০ টাকার সমপরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা তাদের কাছে জমা থাকবে। কেউ চাইলে ৫০০ টাকা ফেরত দিয়ে তার মুদ্রাগুলো নিয়ে যেতে পারবে। তখন থেকেই এই কাগজের নোটের প্রচলন শুরু হয় আর স্বর্ণ বা রৌপ্যমুদ্রাগুলো উঠে যায়।

টাকার এই নোটগুলা হচ্ছে জাস্ট একটা কাগজ। ১০০,২০০, ৫০০,১০০০ টাকার নোটগুলো বিনিময়ের মাধ্যম সহজ করার জন্য সেন্ট্রাল ব্যাংক তৈরি করে। আসল জিনিস বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকে। ব্যাংক যখন নোট ছাড়ে তখন তার সমপরিমাণ গোল্ড কিংবা কয়েন ভল্টে রিজার্ভ রাখে। কেউ যদি বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে এই কাগজগুলো দিয়ে কয়েন ফেরত চায় তখন তা ফেরত দিতে ব্যাংক বাধ্য। 


কোন দেশে যে পরিমান মুদ্রা ছাপা হয় তার সমপরিমান বা সমমূল্যের জিনিস (যেমন স্বর্ণ মুদ্রা কিংবা ডলার) রিজার্ভ মজুত রাখতে হয়, না হলে কাগুজে নোটের মূল্য থাকেনা। মুলতঃ এই নোট দ্বারা সমপরিমাণ পন্যসামগ্রি বিনিময়ের সামঞ্জস্যতা প্রমাণের জন্য এই লিখাটা লিখা হয়। বলা বাহুল্য, কোন দেশ ততক্ষণ পর্যন্ত কোন নোট ছাপাতে পারেনা যতক্ষণ রিজার্ভ প্রস্তুত না হয়। চাহিবা মাত্র বাহককে দেওয়ার মাধ্যমে এই সমমূল্যের বস্তুসামগ্রীই বুঝানো হয়।


বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রা হলো দুটি - এক ও দুই টাকার নোট।অন্যগুলো হচ্ছে ব্যাংক নোট।ধরুন, আপনি কোন ব্যাংক নোটের উপর আস্হা রাখতে পারছেন না।তাই আপনি ২০০টাকার একটি নোট বাংলাদেশ ব্যাংক কাউন্টারে জমা দিয়ে বিনিময় চাইলেন।বাংলাদেশ ব্যাংক আপনাকে চাহিবামাত্র অর্থাৎ সমপরিমাণ এক দুই টাকা করে দিয়ে দিবে।এটি হচ্ছে দায়বদ্ধ থাকার মূল বিষয়।



সরকারি টাকা হিসেবে ১,২,৫ টাকা/পয়সা  ধরা হয়।আর এইগুলো আমাদের মূল অর্থ । বাকি সব (১০...১০০,৫০০,১০০০) টাকা জনজগণের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তৈরি করে। এই ১০০,৫০০,১০০০ টাকার উপর যদি আপনার বিশ্বাস হরিয়ে যায়( মানে অচল মনে হয়),  তখন সেই পরিমাণ (১,২,৫)  টাকা নোট বা পয়সা দিয়ে আপনার অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। এই জন্য উক্ত উক্তিটি বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা গুলোতে লেখে থাকে।


বাংলাদেশে দুই ধরনের নোট প্রচলিত। ১) সরকারি নোট। ২) ব্যাংক নোট। 

গ্রাহক যদি সরকারি নোটের উপর আস্থা রাখতে না পারে, তাহলে গ্রাহককে ব্যাংক নোটের সমমূল্যের ব্যাংক নোট ফেরত দিতে ব্যাংক দায়ী থাকে। তাই নোটের গায়ে একথাটা লিখা থাকে৷ 

( বিঃ দ্রঃ) সরকারি নোট- ১ টাকা, ২ টাকা ও পাঁচ টাকা। 

ব্যাংক নোট- ১০ টাকা, ২০ টাকা,৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ২০০ টাকা, ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা। সরকারি মুদ্রা হলো ১,২,৫ টাকা আর আমরা সচরাচর যেসব কাগুজে মুদ্রা/টাকা ব্যবহার করে থাকি তা বেসরকারি। যেহেতু আমরা সরকারি মুদ্রার পরিবর্তে বাণিজ্যিক ব্যাংকের দেওয়া বেসরকারি মুদ্রা ব্যবহার করে থাকি তাই বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে চাওয়া মাত্রই বাণিজ্যিক ব্যাংক বেসরকারি মুদ্রার বাহককে সে মুদ্রা নিয়ে সরকারি মুদ্রা দিতে বাধ্য থাকবে।

মূলত , যেভাবে ব্যাংকে টাকা থাকলেই শুধু আপনি কাগজের চেক ইস্যু করতে পারবেন as payable to the Bearar লিখা থাকে, টিক সেভাবেই স্বর্ণ/রৌপ বা যেকোনো ফরেন কারেন্সি রিজার্ভে রেখেই কাগজের রশিদ বা টাকা ইস্যু করা হয়ে থাকে ওই স্বর্ণের দামের বিপরীতে লেনদেন করার জন্য, যেভাবে আমরা বর্তমানে চেক দিয়ে করি সব টাকা বহন না করে করে, যদিও ওই গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড এখন আর পুরাপুরি ভাবে মানা হয় না.. 1973 সালে আমেরিকাই মনেহয় প্রথমে এই গোল্ড/ভ্যালু স্ট্যান্ডার্ড থেকে বেরিয়ে আসে ও তার বিশ্বাস ভ্যালুর উপরে, গোল্ড রিজার্ভের বাহিরে ও নোট ছাপতে শুরু করে যা এখনও চলতেছে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন টাকার উপর কেন লিখা থাকে "চাহিবার মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে"। 

Post a Comment

Previous Post Next Post