মাছের সম্পূরক খাদ্য কি কি? মাছের সম্পূরক খাদ্যের উপকারিতা। মাছের সম্পূরক খাদ্যের উৎস সমূহ

মাছের সম্পূরক খাদ্য কি কি? মাছের সম্পূরক খাদ্যের উপকারিতা। মাছের সম্পূরক খাদ্যের উৎস সমূহ।



মাছ চাষ একটি লাভজনক পেষা। প্রাচীনকাল থেকে মানুষের সম্পর্ক মাছের সাথে। আমাদের দেহের শক্তির অন্যতম যোগানদাতা হচ্ছে মাছ। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের কাছে মাছ একটি জনপ্রিয় খাদ্য।  তাই প্রায় প্রাচীন কাল থেকেই এদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য তালিকার একটি হলো মাছ। আগে থেকে এদেশে মানুষের মাছের সাথে সম্পর্ক থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশে মাছ চাষ দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামে গঞ্জে মাছ চাষের প্রতিযোগিতা হচ্ছে।  অনেকে গ্রামে সখের বসে মাছ চাষ করে আবার বানিজ্যিক ভাবে প্রোজেক্ট আকারে মাছ চাষ করা হয়।  দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মাছ পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বাহিরে। সরকারি এবং বেসরকারি ভাবে মাছ চাষের জন্য অনেক ভাবে সাহায্য করা হচ্ছে মাছ চাষিদের।  সরকারি এবং বেসরকারি ভাবে মাছ চাষিদেরকে কখনো কখনো ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে।  তারপরেও চাষীরা ব্যর্থ হচ্ছে বিভিন্ন কারণে।  এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো এই প্রবন্ধে। পুরো লিখাটি ধৈর্য ধরে পড়লে আশা করি উপকৃত হবেন যেকেউ। 



বাংলাদেশ মাছ চাষে বিশ্বে সামগ্রিক ভাবে মাছের জন্য ২৮ তম অবস্থানে আছে। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ ৩-৫ স্থানে প্রায় সবসময় থাকে। আজ আমরা আলোচনা করবো মাছ চাষের লাভজনক পদ্ধতি এবং কেন অধিক খাবার দিয়েও লাভজনক হচ্ছে না সেইসব কারণ এবং সমাধান।



মাছ চাষে লাভজনক না হওয়ার কারণ কি?



খুব কম মানুষ ই আছে যারা সখের বসে মাছ চাষ করে থাকে।  অধিকাংশ চাষিরাই বানিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করে থাকে। কিন্তু সফলতা খুঁজে পায় কতোজন? এর অবশ্য অনেক কারণ আছে৷ কোন কোন কারণে সফল হতে পারেনা মাছ চাষীরা এগুলো নিয়ে প্রথমে আলোচনা করা যাক। 


যেসব কারণে মাছ চাষ লাভজনক হচ্ছে নাঃ-


  • ১. সঠিক পরিকল্পনার অভাব।
  • ২.বাস্তবসম্মত চিন্তা না করে অধিক লাভের আশা করা সব কিছু নির্দিষ্ট মাত্রার বাহিরে করা।
  • ৩. নির্দিষ্ট মাছের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ না করা।
  • ৪. মিশ্র মাসের জন্য মিশ্র খাবার প্রদান না করা।
  • ৫. নির্দিষ্ট অন্তর অন্তর মাছের পরীক্ষা না করা।
  • ৬. খাবার অনুযায়ী মাছের ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা দেখা।
  • ৭. ভালো এবং উন্নতমানের মাছের পোনা না সংগ্রহ করা।
  • ৮. নিজস্ব জায়গায় মাছের পোনা তৈরি না করে কিনে এনে মাছের পোনামাছ চাষ করা।
  • ৯.মাছের খাদ্যের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন না করা।
  • ১০.পানির অবস্থা পর্যবেক্ষণ না করা। 
  • ১১. সুষম খাদ্য প্রদান না করা।  
  • ১২. চাষী প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত না হওয়া বা অবিজ্ঞ না হওয়া। 
  • ১৩. অধিক লাভের আশায় সময় মতো বিক্রি না করা। 
  • ১৪. মাছের পুকুরের তলদেশ পর্যবেক্ষণ না করে নতুন মাছের পোনা ফেলা।
  • ১৫. নিয়মিত পুকুরে প্রোজেক্টে চুন প্রয়োগ না করা।


উপরে উল্লেখিত কারণ গুলো হচ্ছে মাছ চাষে লাভবান বা সফল না হওয়ার কারণ।  এগুলো কেউ ঠিকঠাক ভাবে করলে অবশ্যই সফলতা আসবে।




 



মাছ চাষে সফলতা লাভের জন্য কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা জরুরি।  আপনি যদি সফল হতে চান যেকোনো ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে নিয়ম মেনে কাজে অগ্রসর হতে হবে। কোনো নিয়ম বা পরিকল্পনা ছাড়া যেকোনো কাজেই শতভাগ সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। আপনাকে সবসময় এমন কিছু খুঁজে বের করতে হবে যেটা অল্প পুজিতে লাভ বেশি হচ্ছে। তবে এটা শুধু একদিনের জন্য অনেক বেশি লাভ করার জন্য এমন যেন না হয়। এটা কোনো স্থানী সমাধাম নয়। তাই দীর্ঘস্থায়ী এবং সাশ্রয়ী সমাধান খুঁজে বের করে সেদিকে এগুতে হবে যেকোনো উদ্যোক্তাদের।  


মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর খাবার দেহের জন্য ক্ষতিকর ক্ষতিকর এবং সুষম খাদ্য দেহের জন্য ভালো ঠিক তেমনি অন্যান্য প্রাণী এবং মাছের জন্যেও একই।  একটা সময় ছিল বাংলাদেশের মানুষ প্রচুর ভাত খেতো। ভাত খেয়ে পেট বড়ো করে ফেলতো। এখন সেটা আর করে না। এখন মানুষ ভাবে অল্প খেয়ে কিভাবে শক্তিশালী থাকা যায়।  একই ভাবে মাছ চাষের জন্য আপনাকে এমন কিছু খাবার বের করতে হবে যেগুলো পরিমানে অল্প হলেও কয়েকগুণ বড় করে দেয়। মাছ দ্রুত বড় হলে মাছের উৎপাদন ও বেশি হবে অল্প সময়ে। তাই মাছকেও সুষম খাদ্য দিতে হবে। নিয়মিত সুষম খাদ্য আপনার মাছ উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং লাভজনক অবস্থায় পৌঁছাতে সহায়তা করবে।
নিচে মাছের সুষম বা সম্পূরক খাদ্যের গুরুত্ব এবং উৎস আলোচনা করা হলো যেটা মাছ চাষিদের জন্য খুবি জরুরী। 

 
মাছের সম্পূরক/সুষম  খাদ্য তালিকাঃ-


দেহের বৃদ্ধি ও বেচেঁ থাকার জন্য মাছ পুকুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ফাইটোপ্লাংকটন ( উদ্ভিদকণা),জুপ্লাংকটন(প্রাণীকণা) খুদিপানা,ছোট জলজ পতঙ্গ, পুকুরের তলদেশের কিট,লার্ভা,কেঁচো, ছোট ছোট শামুক, জিনুক,ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে। এগুলো হচ্চ্ছ প্রাকৃতিক খাবার। তাই লাভজনক বানিজ্যিক  মাছ চাষের জন্য প্রাকৃতিক খাবার যথেষ্ট নয়। অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করতে এসব প্রাকৃতিক খাবারের উপর নির্ভর  না করে মাছ কে সুষম  খাদ্য দিতে হবে। 
তাই আজ আমরা জানবো কিভাবে মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরি করা যায় এবং সেগুলো কি কি।

মাছের সম্পূরক/সুষম খাদ্যের উৎসঃ-


মাছের সসম্পূরক খাদ্য তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরণের খাদ্য উপাদান ব্যবহার করা হয়। উৎসের ভিত্তি করে এসব উপাদানকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-উদ্ভিদজাত এবং প্রাণিজাত।

ক)উদ্ভিদজাতঃ এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপাদান হচ্ছে-চালের কুঁড়া,গম,ডালের মিহিভুসি,সরিষার খৈল,তিলের খৈল,আটা,চিটাগুড়, খুদিপানা, রান্না ঘরের উচ্ছিষ্ট, বিভিন্ন নরম পাতা যেমন-মিষ্টিকুমড়া,কলাপাতা, বাঁধা কপি ইত্যাদি।

খ) প্রাণিজাতঃ এদের মধ্যে রয়েছে,শুঁটকি মাছের গুঁড়া বা ফিশমিল,রেশম কীট মিল,চিংড়ির গুঁড়া, কাঁকড়ার গুঁড়া, হাঁড়ের চূর্ণ(বোন মিল), শামুকের মাংস, গবাদিপশুর রক্ত ইত্যাদি।

আরো পড়ুন মাছের খাদ্য নিয়ে এখানে


সম্পূরক/সুুু ষমষ খাদ্যের উপকারিতাঃ

১। মাছকে নিয়মিত সম্পূরক খাবার সরবরাহ করকে অধিক ঘনত্বে পোনা ও বড় মাছ চাষ করা যায়।
২।অল্প সময়ে মাছকে বড় করা সম্ভব হয়। ফলে আবার মাছ ফালানো যায়।
৩।পোনার বাঁচার হার বেড়ে যায়।
৪।মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৫।মাছের দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি পায়।
৬।মাছ পুষ্টির অভাবজনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকে।
৭।সর্বোপরি কম সনয়ে অধিক মুনাফা লাভ সম্ভব হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post