বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি, কিভাবে বিভিন্ন বীজ সংরক্ষণ করবেন?
[এক নজড়ে জেনে নিন
- বীজ সংরক্ষণ কি?
- কিভাবে বীজ সংরক্ষণ করা যায়?
- বীজ সংরক্ষণের উপায়
- ধাণের বীজ সংরক্ষণের উপায়।
- ধাণের সঠিক বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি
- তরমুজের বীজের সংরক্ষণ পদ্ধতি
- তরমুজের বীজ কিভাবে সংরক্ষণ করে?
- বীজ ভালো রাখার উপায়
- বীজ প্যাকেট করে রাখার উপায়।
- ভুট্টার বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি ]
বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য বীজ সংরক্ষণ একটি প্রাচীন পেশা। নতুন ফলনের জন্য কৃষক বীজ সংরক্ষণ করে। আবার অনেক সময় বীজের দাম বেড়ে যায়। তখন বিপাকে পরে কৃষক। বর্তমানের প্রেক্ষাপটে বীজের দাম লাগামছাড়া। তাই অধিক লাভের জন্য বীজ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। আবার কৃষক বীজ কিনে আশানুরূপ ফলন ও পায়না। বীজের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। বীজ সংরক্ষণ করা সহজ কাজ নয়। নির্দিষ্ট নিয়মে বীজ সংরক্ষণ করতে হয়। আজ আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। আশা করি পুরোটি লিখা মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়লে সমাধান পাবেন।
বীজ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া :
বীজ শুকানো:বীজকে ভালো ভাবে সংরক্ষণ করার জন্য বীজকে শুকানো প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে বীজের আর্দ্রতা একটি স্ট্যান্ডার্ড মাত্রায় আনার জন্যই বীজ শুকানো হয়। ক্ষেত থেকে যখন ফসল কাটা হয় তখন এর আর্দ্রতা থাকে ১৮%থেকে ৪০% পর্যন্ত। এই আর্দ্রতা বীজের জীবনীশক্তি শক্তি নষ্ট করব ফেলে। তাই বীজ সংরক্ষণের জন্য বীজের আর্দ্রতাকে ১২% বা তার নিচে নিয়ে আনতে হবে। আর এই জন্যই বীজকে শুকানো প্রয়োজন।
এবার আশুন জেনে নেই বীজ কিভাবে শুকাতে পারি আমরা। ২ভাবে বীজ শুকানো যায়। ১. প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক বাতাসে শুকানো এবং ২. উত্তপ্ত বাতাসে শুকানো।
বীজ শুকানোর সময় নির্ভর করে (১) বীজের আর্দ্রতার মাত্রা(২) বাতাসের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার মাত্রা (৩) বাতাসের গতি এবং (৪) বীজের পরিমাপের উপর।
মনে রাখতে হবে যে,(১) বেশি তাপমাত্রায় বীজ শুকালে বীজের ক্ষতি হয়। যেমন- বীজের জীবনীশক্তি ও অংকুরোদগম ক্ষমতা কমে যায়।
পরিমিত তাপে বীজ শুকালে -
-সর্বোচ্চ মানের বীজ পাওয়া যায়।
-বীজ দীর্ঘকাল সংরক্ষণ করা যায়।
-বীজের ব্যবসায় আর্থিক লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
বীজের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা জরুরি :
একটি বীজের নমুনার মধ্যে (১) বিশুদ্ধ বীজ (২) ঘাসের বীজ (৩) অন্যান্য শস্যের বীজ ও (৪) পাথর থাকে। এই চারটি ভাগের মধ্যে বিশুদ্ধ বীজের শতকরা হার বের করাই বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা।
বীজের অংকুরোদগম পরীক্ষাঃ
নমুনা বীজের শতকরা কতটি বীজ গজায় তা বের করাই অংকুরোদগম পরীক্ষা। যখন বীজের আর্দ্রতা ৩৫-৬০% বা তার উপর হয় তখন অংকুরোদগম গম শুরু হয়। ১০০ টি বীজ গুনে একটি বেলে মাটিপূর্ন মাটির পাত্রে রেখে বা পানি দ্বারা ভিজিয়ে রাখতে হবে।প্রতিদিন দেখতে হবে পানি যেন না শুকিয়ে যায়। তারপর যখন অংকুরোদগম শুরু হবে যতটি বীজ গজাবে ততটি হবে বীজের অংকুরোদগম হার।
বীজের জীবনীশক্তি পরীক্ষা:
এই পরীক্ষার জন্য বীজ গজানোর একটি প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি করা হয়। এই প্রতিকূল অবস্থায় যে বীজ বেশি গজাবে সে বীজেরই জীবনীশক্তি বেশি বলে প্রতীয়মান হবে।
বীজ সংরক্ষণের পদ্ধতি:
বাংলাদেশে বীজ সংরক্ষণের অনেক পদ্ধতি আছে। এক এক ফসলের বীজের জন্য এক এক রকম পদ্ধতি। যেমন দানাজাতীয় শস্য- ধান,হম,ভূট্টা,বীজের জন্য ধানগোলা, ডোল মাটির পাত্র,চটের বস্তা, পলিব্যাগ, মটকা, ও বেড ব্যবহার করা হয়।
বীজ শুকানো,সংরক্ষণ ও চটের বস্তায় সংরক্ষণ পদ্ধতি :
বীজ শুকানো বলতে বীজ থেকে অতিরিক্ত আর্দ্রতা সরানো এবং পরিমিত মাত্রায় নিয়ে আসা। বাংলাদেশে বীজ সাধারণত রোদে বা সূর্যতাপে। এই আর্দ্রতা ১২-১৩% হলে ভালো হয়। ১২-১৩% এ আনতে পর পর তিনদিন প্রখর রোদে শুকাতে হয়। বীজ ভালো মত শুকিয়েছে কিনা বীজে কামর দিলে 'কট' করে উঠবে। বীজ পোকার উপদ্রব থেকে রুক্ষার জন্য বীজের বস্তায় নিমের পাতা,নিমের শিকড়,আপেল বীজের গুঁড়া,বিশকাটালি ইত্যাদি মেশানো হয়।
ধান গোলায় ও ডোলে সংরক্ষণ:
ধান গোলার আয়তন বীজের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। বীজ রাখার আগে ধান গোলার ভিতরে ও বাইরে গোবর ও মাটির মিশ্রণের প্রলেপ দিয়ে বীজ রাখার উপযুক্ত করতে হবে। যাতে করে ভিতরে কোনো রকম বাতাস না যেতে পারে।
পলিথিন ব্যাগে বীজ সংরক্ষণ :
আজকাল পাঁচ কেজি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পলিথিন ব্যাগে বীজ সংরক্ষণ করা হয়। এই ব্যাগে আরডিআরএস কর্তৃক উদ্ভাবিত। এটা সাধারণ পলিব্যাগ থেকে অপেক্ষাকৃত মোটা হয়। শুকানো বীজ এমনভাবে পলিথিন ব্যাগে রাখতে হবে যাতে কোনো ফাঁক না থাকে এবং ব্যাগের ভিতর কোনো বাতাস ও নাকে। অর্থাৎ ব্যাগের সব বাতাস বের করে ফেলতে হবে। তারপর ব্যাগের মুখ তাপের সাহায্যে এমনভাবে বন্ধ করতে হবে যেন বাইরে থেকে ভিতরে বাতাস প্রবেশের সুযোগ না থাকে।
মটকায় বীজ সংরক্ষণের পদ্ধতি :
মটকার বাইরে মাটি বা আলকাতরার প্রলেপ দেওয় হয়। এর ভিতরে শুকানো বীজ রেখে তা সংরক্ষণ করা হয়। অতঃপর ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করে উপরে মাটির প্রলেপ দিয়ে বায়ুরোধক করা হয়।